আদর্শ ও রাজনৈতিক দর্শন
বর্তমান বাংলাদেশ নামের এই অঞ্চল প্রায় ১১শ’ বছর পরাধীন ছিলো। বৃটিশ-পাকিস্তানিরা হলো এই ১১শ’ বছরের শেষ ঔপনিবেশিক শাসক। হাজার বছরেরও বেশি কালব্যাপী বিদেশী শাসন থেকে মুক্ত হলেও দেশীয় শাসকদের দুঃশাসনের কবল থেকে বাংলাদেশ আজও মুক্ত হয়নি।
১৯৭১ সনে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত বাংলাদেশ গত অর্ধ শতাধিক বছর ধরে যে শাসনব্যবস্থা দিয়ে পরিচালিত হয়ে আসছে তা ‘একদলীয় শাসন’ ‘সামরিক শাসন’ বহুদলীয় গণতন্ত্রের নামে ‘স্বৈরশাসন’ এবং ভিন্ন ভিন্ন রূপে পরিবার-তান্ত্রিক অপরাজনীতি। যার সমাপ্তি এখনও ঘটেনি বরং তা বিবিধ নামে চালু আছে।
এ যাবৎকালে আমাদের দেশীয় শাসকরা স্বাধীন দেশের উপযোগী কোনো রাষ্ট্রীয় কাঠামো এবং শাসনব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারেনি। যার ফলে, স্বাধীনতার মূল লক্ষ্য-সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার আদৌ প্রতিষ্ঠালাভ
করেনি।
বাংলাদেশ আর্থ-সামাজিক, তথ্য-প্রযুক্তি, শিক্ষা-সংস্কৃতির ক্ষেত্রে অনেক দূর এগিয়ে গেলেও রাজনীতির ক্ষেত্রে দেশ পরিচালিত হচ্ছে ‘৪০-‘৫০ দশকের বৃটিশ ও পাকিস্তানি আইন কানুন দ্বারা। স্বাধীনতার পরও সরকার এবং বিরোধী
দলসহ সব রাজনৈতিক দল ঔপনিবেশিক রাজনৈতিক সংস্কৃতির দ্বারা প্রভাবিত। আমলারা এদেশের সন্তান হয়েও বৃটিশ আমলের বিধিমালা ও প্রশিক্ষণের শিকার। এদিকে গত অর্ধ শতাধিক বছরে দেশে বহুবিধ উন্নয়ন সাধন হলেও রাজনৈতিক দলসমূহ এবং সরকারি কর্মকর্তাদের ঔপনিবেশিক মন-মানসিকতা, চিন্তা চেতনায় কোনো পরিবর্তন ঘটেনি। এর ফলশ্রুতিতে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে উন্নয়ন কর্মকান্ড বারবার বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। সেই মন-মানসিকতার পরিবর্তন ঘটিয়ে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে উন্নয়ন পরিকল্পনা এবং কর্মকান্ডে জাতিকে উদ্বুদ্ধ
করতে হবে।
সুফিবাদি নাগরিক মজলিস (সুনাম) মনে করে “যে আইন ও বিধির দ্বারা বিদেশি শাসকেরা শাসন করে, সে আইন ও বিধিকে বদলিয়ে নিজেদের উপযোগী শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করাই হলো স্বাধীনতার মূলকথা। বিদেশি শাসক বদলিয়ে
দেশীয় শাসকদের ক্ষমতায় বসিয়ে ঔপনিবেশিক আমলের শাসন-কাঠামো দিয়ে
দেশ পরিচালনা করা জনগণের জন্যে এক ধরনের পরাধীনতা; যাকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় ‘অভ্যন্তরীণ ঔপনিবেশবাদ’ (Internal Colonialism)। ”
সুফিবাদি নাগরিক মজলিস (সুনাম) আধ্যাত্মিক মূল্যবোধের সাথে সাথে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, উদার গণতন্ত্র, সাম্য, সুনীতি-সুশাসন, অহিংসা, পরমতসহিষ্ণু, ধর্মীয় সহনশীলতা ও অসাম্প্রদায়িক চেতনায় দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে ।
আমরা, বাংলাদেশের সুফিবাদিরা আমাদের ১৯৭১ সনের মহান ও গৌরবোজ্জ্বল মুক্তিযুদ্ধের উত্তরাধিকারকে বহন করছি। তাই আমাদের অঙ্গীকার, যেসকল মহান আদর্শ ও গণআকাঙ্ক্ষা আমাদের বীর বাঙ্গালীকে মরণপণ মুক্তিযুদ্ধের সশস্ত্র সংগ্রামে আত্মনিয়োগ ও জীবন উৎসর্গ করার বিজয়মন্ত্রে উদ্বুদ্ধ করেছিল, সেই সকল সুমহান উদ্দেশ্য ও আদর্শিক চেতনা বাস্তবায়নে আমরা সদা
সচেষ্ট থাকবো। আমাদের প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রাম হবে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনাদীপ্ত।
সুফিবাদি নাগরিক মজলিস (সুনাম) বিশ্বাস করে বাঙ্গালী জাতির মুক্তিযুদ্ধ ছিলো অসত্য, অন্যায় ও জুলুম-নির্যাতনের বিরুদ্ধে সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার লড়াই। পাকিস্তানি জালেম শাসকগোষ্ঠীর জুলুম, অত্যাচার, নির্যাতন-নিপীড়নে নিষ্পেষিত গোটা বাঙ্গালী জাতির মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ ছিলো আল্লাহ্র নির্দেশিত সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে গুরুদায়িত্ব পালনের শামিল। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সন্তান মুক্তিযোদ্ধারা সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে যুদ্ধ করেছিলো। পক্ষান্তরে পাকিস্তানি হানাদার ও তাদের এদেশীয় দোসর তথা যুদ্ধাপরাধীরা অন্যায় ও অসত্যের পক্ষে যুদ্ধ করেছিলো।
এখানে উল্লেখ্য যে, ১৯৭১ সনের মহান মুক্তিযুদ্ধে ইসলামের নামধারী কিছুসংখ্যক পথভ্রষ্ট ব্যক্তি, সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান ছাড়া কোনো হাক্কানী আলেমউলামা, পীর-মাশায়েখ, তরিকত তথা সুফিবাদিসহ সর্বস্তরের গণমানুষ পাকিস্তানি
হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসরদের সমর্থন বা সহযোগিতা করেনি। বরং তাঁদের প্রতিষ্ঠিত দরবার, দরগাহ্, মাজার, খানকাহ্ শরীফ ও আস্তানাসমূহ মুক্তিযোদ্ধাদের
হযোগি ও আশ্রয়স্থল হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে, যা সংশ্লিষ্ট সকলেরই জানা। মহান অলি-আউলিয়াগণের আদর্শের উত্তরসূরি হিসেবে সুফিবাদি নাগরিক মজলিস (সুনাম) অসাম্প্রদায়িক সংস্কৃতি ও ধর্মীয় সম্প্রীতি, সাম্য, সুনীতি, সর্বজনীন ভ্রাতৃত্ব সর্বোপরি মানবতার আদর্শে বিশ্বাস করে। এ সংগঠন দেশে প্রচলিত দলাদলি,
মারামারি, হরতাল, অবরোধ, সন্ত্রাসনির্ভর, মেধাশূন্য বিশৃঙ্খল রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না। কেননা, ইসলাম তথা সুফিবাদে কখনো হিংসা-প্রতিহিংসা, দলাদলি সমর্থিত ছিলো না; এখনো নেই ।
“সুন্নি সুফি দর্শনের মূল কথা, সবার উপরে মানবতা” এই মহাসত্যকে সুফিবাদি নাগরিক মজলিস (সুনাম) বিশ্বাস করে সর্বক্ষেত্রে ধর্মের অপব্যবহার ও অপব্যাখ্যাকে অমার্জনীয় অপরাধ মনে করে। বিশেষ করে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের জন্যে যারা ধর্মের অপব্যবহার ও অপব্যাখ্যার আশ্রয় নেয় সুফিবাদি নাগরিক মজলিস (সুনাম) তাদেরকে ধর্ম ও মানবতার শত্রু মনে করে। তবে, সুফিবাদি নাগরিক মজলিস (সুনাম) মনে করে সমাজ ও রাজনীতিতে প্রকৃত
সর্বজনীন ধর্মীয় ও মানবিক মূল্যবোধের বিকাশ একান্ত অপরিহার্য। বর্তমান রাজনীতিতে যে সংঘাত, সন্ত্রাস, হানাহানি, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, লুটতরাজ, নৈরাজ্য চলছে তার মূলে রয়েছে ধর্মীয় জ্ঞানে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি উপলদ্ধি না করা, সর্বজনীন ধর্মীয় ও মানবিক মূল্যবোধের অনুপস্থিতি। যা মানবিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে প্রধান অন্তরায়।
সুফিবাদি নাগরিক মজলিস (সুনাম) মনে করে ধর্মজ্ঞানহীন রাজনীতিই এক সময়ে অপরাজনীতির রূপ ধারণ করে। বর্তমানের অসুস্থ অপরাজনীতি তারই প্রতিচ্ছবি। তাই, রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার নয় বরং ধর্মের অপব্যবহারকে
নিষিদ্ধ করতে হবে। এক কথায়, এ সংগঠন ধর্মের নামে রাষ্ট্রের সংবিধান ও বাঙ্গালীর শাশ্বত সংস্কৃতি বিরোধী রাজনীতি এবং ধর্মীয় আবেগকে পুঁজি করে রাজনীতির নামে অপরাজনীতি চর্চা তথা কোনো প্রকার দ্বন্দ্ব-সংঘাত, সন্ত্রাস, হানাহানি, জ্বালাও-পোড়াও, নৈরাজ্য ইত্যাদিতে বিশ্বাস করে না। তাই, সত্যিকার অর্থে সুফিবাদি নাগরিক মজলিস (সুনাম) হচ্ছে শান্তিপ্রিয়, মহান মুক্তিযুদ্ধের
চেতনা ও সুন্নি সুফি দর্শনে বিশ্বাসী প্রগতিশীল রাজনৈতিক সংগঠন।
সুফিবাদি নাগরিক মজলিস (সুনাম) বিশ্বাস করে, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রীয় অবকাঠামোতে প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক নীতি অবলম্বন করেও সমাজ ও ব্যক্তি জীবনে মানবতাবাদি ইসলামি মূল্যবোধের দ্বারাই সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠিত হতে পারে; যার ফলশ্রুতিতে অর্জিত হতে পারে সামাজিক স্থিতিশীলতা, প্রগতি এবং ধর্মীয় সম্প্রীতি। তাই, এ সংগঠন ইসলামের শাশ্বত বাণী প্রচার-প্রসারের মাধ্যমে মানবতার নীতি পরমতসহিষ্ণুতার নীতি, অসাম্প্রদায়িক চেতনার নীতি ও উদার গণতান্ত্রিক আধুনিকতার নীতির অপূর্ব সমন্বয়ের দ্বারা সকল ধর্মাবলম্বীর ধর্মীয় ও শাসনতান্ত্রিক অধিকার সংরক্ষণে অঙ্গীকারাবদ্ধ।
“ধর্ম যার যার বাংলাদেশ সবার” এই সুমহান নীতিতে সুফিবাদি নাগরিক মজলিস (সুনাম) বিশ্বাস করে। যদিও এ সংগঠন ইসলামের উদারনৈতিক মানবতাবাদি চেতনায় জনগণকে সামাজিকভাবে উদ্বুদ্ধকরণের মাধ্যমে ধর্মীয়
সম্প্রীতির লক্ষ্যে সমাজ কাঠামোতে ইসলাম ধর্মের শাশ্বত মানবিক মূল্যবোধের বিকাশ ও প্রতিফলনকে উৎসাহিত করবে। এ সংগঠন ইসলাম ও সুফিতত্ত্বের প্রকৃত শিক্ষার আলোকে সংকীর্ণতা পরিহার করতঃ ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল শ্রেণিপেশার মানুষের অংশগ্রহণের ভিত্তিতে ‘অংশগ্রহণমূলক গণতন্ত্র’ (Participatory Democracy) তথা উদারনৈতিক গণতন্ত্র চর্চা অব্যাহত
রাখবে।
“সোনার মানুষ সোনার দেশ, সুফিবাদির বাংলাদেশ” এই মৌলিক শ্লোগানের ভিত্তিতে সুফিবাদি নাগরিক মজলিস (সুনাম) এদেশের সাধারণ মানুষকে প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে আত্মশুদ্ধি করতঃ আত্মজাগরণের দ্বারা সোনার
মানুষে পরিণত করে তাদের দ্বারা সাংগঠনিক কার্যক্রম চালাবে। এ সংগঠন বিশ্বাস করে, প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এদেশের জনগণকে প্রথমত সোনার মানুষে পরিণত করতে পারলেই স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ বাস্তবে সোনার বাংলাদেশে পরিণত হবে।
ইসলাম একটি উদারনৈতিক ও প্রগতিশীল ধর্ম, তাই উদার গণতন্ত্রের সাথে ইসলামের কোনো সংঘাতের অবকাশ নেই। সুফিবাদি নাগরিক মজলিস (সুনাম) মনে করে প্রকৃত ইসলাম তথা সুফিবাদে উগ্রবাদ-জঙ্গীবাদের কোনো স্থান
নেই, বরং প্রকৃতপক্ষে ইসলামই সত্যিকারের সভ্যতাকে উপহার দিয়েছে এবং সভ্যতাকে ধর্মীয় সহনশীলতার মহান আদর্শ শিক্ষা দিয়েছে। তাই এ সংগঠন ধর্মকে রাজনীতির পুঁজি হিসেবে ব্যবহার না করে আত্মিক উন্নতির লক্ষ্যে
পরকালের পাথেয় হিসেবে গ্রহণ করবে এবং বিবেকের উৎকর্ষতা ও মানুষের শ্রেয়বোধকে জাগ্রত করার মাধ্যমে ধর্মের মূল উদ্দেশ্যকে ব্যক্তি ও সমাজ জীবনে প্রতিষ্ঠিত করবে; কোনো অবস্থাতেই ধর্মকে রাজনীতির পুঁজি হিসেবে ব্যবহার করবে না অথবা ধর্মতত্ত্বের বা সুফিতত্ত্বের ভিত্তিতে রাষ্ট্র পরিচালনার নীতি অবলম্বন করে সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক বৈষম্যের পটভূমি রচনা করবে না।
সুফিবাদি নাগরিক মজলিস (সুনাম) অনুসৃত রাজনৈতিক দর্শন ও নীতিমালার আলোকে দেশে সুষ্ঠু, সুন্দর, প্রকৃত দেশপ্রেমিক ও অসাম্প্রদায়িক ধারার রাজনীতি ফিরিয়ে আনতে প্রচেষ্টা চালাচ্ছে এবং চালাবে ইনশাআল্লাহ্।
রাজনীতিতে গুণগত ও অর্থবহ পরিবর্তন এবং অসাম্প্রদায়িক সংস্কৃতি, পারস্পরিক সম্প্রীতি, ধর্মীয় ও মানবিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা করাই এ সংগঠনের অন্যতম লক্ষ্য। দেশ ও জাতিকে উগ্র সাম্প্রদায়িকতা, সন্ত্রাস, নৈরাজ্য, জঙ্গীবাদ, কালো টাকার দৌরাত্ম্য, পেশীশক্তির ব্যবহার, স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতিমুক্ত কল্যাণমুখী দেশ গড়ার
লক্ষ্যে এ সংগঠনের অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে ইনশাআল্লাহ্। যার লক্ষ্যই হচ্ছে, মহান মুক্তিযুদ্ধের গণআকাঙ্ক্ষা তথা স্বাধীনতার স্বাদ প্রকৃত অর্থে আপামর
জনগণের দ্বার প্রান্তে পৌঁছে দিয়ে জাতীয় সংহতিকে বলিষ্ঠ ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত করা। এখানে স্পষ্টত উল্লেখ্য যে, এ সংগঠন সকল ধর্মীয় সম্প্রদায়ের কাছে আল্লাহ্ একত্ববাদ, হজরত মোহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামএর মানবতাবাদ ও ধর্মীয় সহিষ্ণুতার বাণী প্রচার করবে কিন্তু, জনগণের ধর্মীয় মূল্যবোধ ও দেশপ্রেমের চেতনায় আঘাত হানতে পারে এমন কোনো রাষ্ট্রীয় নীতি
বা সিদ্ধান্তকে সমর্থন করবে না।
মহান আল্লাহ্ এই ঘোষণাপত্রে উল্লেখিত আদর্শ ও রাজনৈতিক দর্শন পুরোপুরি জেনে ও মেনে এ সংগঠন পরিচালনা করার সুযোগ দান করুন।
আমীন।
লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য:
মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম- এর প্রদর্শিত হিদায়াত, উদার ও অসাম্প্রদায়িক আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে বাংলাদেশের সকল মানুষের রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যে বাংলাদেশকে একটি উদার গণতান্ত্রিক কল্যাণ রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা।
উপরোক্ত লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্যে সংগঠনের কার্যক্রম নিম্নরূপ হবে
(ক) মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম- এর সাম্য, সুনীতি ও ভালোবাসার মূল্যবোধের নীতিতে এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ভিত্তিতে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে দেশের সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের মধ্যে ঐক্য সৃষ্টির মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে সর্বপ্রকার অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক হুমকি এবং বিশৃঙ্খলা হতে রক্ষা করার প্রচেষ্টা চালানো;
(খ) দায়িত্বশীল, চরিত্রবান, সৎ ও যোগ্য নেতৃত্ব সৃষ্টির মাধ্যমে শোষণহীন, অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠনের মধ্য দিয়ে দেশবাসীর সামগ্রিক কল্যাণ সাধন করা;
(গ) ন্যায় ও ইনসাফের ভিত্তিতে বিশ্বের সকল রাষ্ট্রের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন করা, বিশেষ করে মুসলিম ও প্রতিবেশী রাষ্ট্রসমূহের সঙ্গে গভীর বন্ধুত্ব স্থাপন করা; এবং
(ঘ) বিশ্বের সকল নির্যাতিত, নিপীড়িত, বঞ্চিত, অবহেলিত, শোষিত ও মজলুম মানুষের ন্যায়সঙ্গত আন্দোলন সংগ্রামে নিয়মতান্ত্রিক সমর্থন দেওয়া।
মৌলিক বিশ্বাসমালা (আকাইদ):
আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আতের সর্বসম্মত আকিদা-ই এ সংগঠনের আকিদা । সৃষ্টি জগতের একমাত্র স্রষ্টা মহান আল্লাহ্, সমগ্র সৃষ্টি জগতের ওপর তাঁর সার্বভৌমত্ব বিদ্যমান। তাঁর প্রশংসায়, মর্যাদায়, আধিপত্যে, ক্ষমতায় কারও অংশীদারিত্ব সাব্যস্ত করা যাবে না। তাঁর আনুগত্য স্বীকার করা ও তাঁর ইবাদত করা আমাদের জন্যে অপরিহার্য।
হজরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ্ প্রেরিত রাসূল। তাঁর পর কিয়ামত পর্যন্ত আর কোনো নবী বা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আসবেন না। তিঁনিই সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ নবী ও রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)। তাঁর নবুওয়ত ও রিসালাত কিয়ামত পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। নবী মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে মহান আল্লাহ প্রদত্ত সর্বগুণে নিঃসন্দেহে মেনে নেয়াই হচ্ছে ইমান। তাঁর ওপর নাজিলকৃত আল্লাহ্ সর্বশেষ কিতাব আল কোরআন অনন্তকাল মানুষকে সঠিক পথের দিক-নির্দেশনা ও আলোর দিশা দিবে। তাঁর জীবন, কথা ও কর্মপদ্ধতি মানব জাতির চিরদিনের জন্যে অনুসরণীয়। দোলনা থেকে কবর পর্যন্ত তাঁর আদর্শ বিদ্যমান। তাঁকে নিজের জীবন, সম্পদ, পিতা-মাতা, সন্তান-সন্ততি, পরিবার-পরিজন এমনকি সৃষ্টি জগতের সবকিছু থেকে যে যতো বেশি ভালোবাসবে আল্লাহ্র কাছে সে-ই বেশি ইমানদার হিসেবে বিবেচিত হবেন। তিঁনিই হলেন উম্মতের শাফায়াতকারী। সাহাবায়ে কেরাম রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম আকাশের তারকার মতো তথা সত্য, ন্যায় ও
ইনসাফ-এর প্রতিক; সত্যের মাপকাঠি। তাঁদেরকে সমালোচনার পাত্রে পরিণত করা স্পষ্ট গোমরাহী।
সুফিবাদ-এর সংক্ষিপ্ত স্বরূপ
বলতে সংকোচ নেই যে, সুফিবাদ নিয়ে অল্পবিস্তর গবেষণা এবং ইহা সম্পর্কে খন্ডিত জ্ঞানের কারণে ছড়িয়েছে বিভ্রান্তি, হয়েছে সত্য গোপন। ব্যাপক গবেষণায় সত্য উদঘাটনপূর্বক সুন্নি সুফি দর্শনে প্রকৃতপক্ষে সুফিবাদ সম্পর্কে যা জানা যায়
তার সংক্ষিপ্ত স্বরূপ নিম্নে উপস্থাপন করা হলো
০১. সুফিবাদ-এ শরিয়তে নববির কোনো খেলাপ নেই;
০২. সুফিবাদ-এ পীর বা মুর্শিদকে তাজিমি সিজদা করার মতো হারাম কর্মকান্ড নেই;
০৩. সুফিবাদ-এ কবর বা মাজারে তাজিমি সিজদা করা হারাম। আর
ইবাদতের নিয়্যতে করা কুফুরী;
০৪. সুফিবাদ-এ অশ্লীল গান-বাজনা, খেল-তামাশা, নেশা জাতীয় দ্রবাদি গ্রহণসেবন বা পান করা সম্পূর্ণরূপে হারাম;
০৫. সুফিবাদ-এ কতিপয় শর্তসাপেক্ষে ‘সামা’-‘কাউয়ালি’ করা জায়েয। উল্লেখ্য যে, উক্ত ‘সামা’ বা ‘কাউয়ালি’ আল্লাহ্-রাসুলের মহব্বত বৃদ্ধি করার উদ্দেশ্যে হতে হবে;
০৬. সুফিবাদ-এ ধার্মিকতা আছে কিন্তু ধর্মান্ধতার কোনো স্থান নেই;
০৭. সুফিবাদ-এ সংসার বিমুখতা তথা বৈরাগ্যবাদের কোনো স্থান নেই, কিন্তু নির্জনে মোরাকাবা-মোশাহাদা করার বিধান আছে;
০৮. সুফিবাদ হচ্ছে ইমান হিফাজত করা, কুপ্রবৃত্তির সাথে জিহাদ করা, রিপুতাড়িত মুর্খতা, শয়তানের ক্রীড়া-কৌতুক, কামনা-বাসনা, দুশ্চরিত্রের পরিহার করা এবং সর্বসাধারণের সেবা করার নাম;
০৯. সুফিবাদ-এ আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আতের বিশুদ্ধ ইমান-আকিদা পোষণ করা হয় বিধায় সাচ্চা সুন্নিয়ত প্রতিষ্ঠায় অবদান রাখা যায়;
১০. সুফিবাদ-এ ইমানের মৌলিক অবস্থানে থেকে ‘সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি’ করা যায়;
১১. সুফিবাদ-এ আছে আদব, ভক্তি, মহব্বত, সোহবত ও রিয়াজত;
১২. সুফিবাদ-এ রিয়া, হিংসা, বিদ্বেষ, অহংকার, নিজ প্রশংসার মোহ, লোভলালসা ইত্যাদি নেই;
১৩. সুফিবাদ মানুষের অন্তরের বিশুদ্ধতা ও পবিত্রতার ওপর সমধিক গুরুত্বারোপ করে থাকে;
১৪. সুফিবাদ মানুষের সুকুমার বৃত্তিগুলো (যেমন-সততা, বিনয়-নম্রতা, দয়াঅনুগ্রহ, উদারতা, মহানুভবতা, ক্ষমা, ধৈর্য ও শোকর প্রভৃতি) উত্তমরূপে বিকাশসাধন ও প্রকাশ করে;
১৫. সুফিবাদ মানুষকে কুৎসা, পরনিন্দা, পরচর্চা, পরশ্রীকাতরতা ইত্যাদি থেকে মুক্ত রেখে আত্মসমালোচনার দ্বারা আত্মশুদ্ধি করতে উদ্বুদ্ধ করে;
১৬. সুফিবাদ মানুষকে মানবিক হয়ে মানবতার কল্যাণে কাজ করতে শেখায়;
১৭. সুফিবাদ মানুষকে স্রষ্টার সকল সৃষ্টিকে স্তর ভেদে ভালোবাসতে শেখায়;
১৮. সুফিবাদ মানুষকে ভোগ নয়, ত্যাগে এবং ধ্বংস নয়, সৃষ্টিতে তৃপ্তিবোধ জাগ্রত করে;
১৯. সুফিবাদ মুমিনকে ইমানের অনিবার্য দাবি হিসেবে স্বদেশপ্রেমে উজ্জীবিত করে;
২০. সুফিবাদ চর্চায় পরিবার-পরিজন, আত্মীয়-স্বজন, সমাজ ব্যবস্থায় এমনকি রাষ্ট্রের সর্বত্র অনায়াসে ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করা যায়;
২১. সুফিবাদ মানুষকে সবর, শোকর, সহিষ্ণুতা ও তাকওয়ার শিক্ষা দেয়;
২২. সুফিবাদ কোনো ভ্রান্ত মতবাদ নয় বিধায় ইহা অল্প সময়ে মানুষকে মহান আল্লাহ্ ও তাঁর প্রিয় হাবিব হজরত মোহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সন্তুষ্টি অর্জনে সক্ষম করে তোলে; ইত্যাদি।